কালের কণ্ঠ
বাণিজ্য ডেস্ক | ২৬ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সদস্যদের পাশে রয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক। এ বছর আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই দেশব্যাপী প্রবল বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ মধ্যাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়েছে।
এতে গ্রামীণের ২৬টি জোনের ব্যাপক এলাকা কমবেশি বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। এই জোনগুলো হচ্ছে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নীলফামারী, গাইবান্ধা, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, জামালপুর, শেরপুর, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ জোন।
বন্যার শুরুতেই এই দুর্যোগ মোকাবেলার উদ্দেশ্যে ব্যাংকের এমডি রতন কুমার নাগের নির্দেশনায় প্রধান কার্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের একটি ‘বন্যা দুর্যোগ মোকাবেলা কমিটি’ গঠন করা হয়। এই কমিটি বন্যাদুর্গত জোনগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে বন্যা পরিস্থিতির নিয়মিত মনিটরিং করে। তারা বন্যাদুর্গত সদস্যদের দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করে বন্যার তথ্য সংগ্রহ, কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণ ও প্রজেকশনের উদ্দেশ্যে প্রধান কার্যালয়ে একটি ‘বন্যাসংক্রান্ত তথ্য কমিটি’ গঠন করা হয়। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ব্যাংকের ২৬টি জোনের অন্তর্ভুক্ত ১৫৫ এরিয়ার ৬২৮টি শাখার ছয় লক্ষাধিক সদস্য-পরিবার এ বন্যায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাংকের সহকর্মীরা বন্যাকালীন প্রত্যেক বন্যার্ত সদস্যের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে তাদের পাশে থেকে দুর্যোগ মোকাবেলায় তাদের সহযোগিতা প্রদান করেন।
এ ছাড়া যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় গ্রামীণ ব্যাংকের একটি দুর্যোগকালীন তহবিল রয়েছে।
এবারও বন্যার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বন্যাদুর্গত এলাকায় কিস্তি আদায় বন্ধ রেখে ব্যাংকের দুর্যোগকালীন তহবিল থেকে বন্যার্ত সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়। পাশাপাশি সদস্যপ্রতি ন্যূনতম এক হাজার টাকা করে তিন কোটি ২৩ লাখ টাকা বিনা সুদে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া এখনো চালু রয়েছে।
এ ছাড়া স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় স্থানীয় পর্যায়ে নিয়মিত স্বাস্থ্যক্যাম্পের আয়োজন করে বন্যার্তদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসনে গ্রামীণ ব্যাংক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। যেসব সদস্যের গৃহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের গৃহ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য বিনা সুদে গৃহ পুনর্বাসন ঋণ, দুর্যোগ পুনর্বাসন ঋণ প্রদানের ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। যেসব সদস্য ফসল ও ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের অতিরিক্ত পুঁজি হিসেবেও সহায়ক ঋণ হিসেবে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব ছাড়াও ব্যাংকের অন্যান্য স্বাভাবিক ঋণ কার্যক্রম জোরদার করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সদস্য ও সদস্য পরিবারের সংকট কাটিয়ে তাদের যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক কর্মময় জীবনপ্রবাহে ফিরিয়ে আনার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ব্যাংকের এমডি রতন কুমার নাগ বলেন, ‘অতীতেও ব্যাংকটি দুর্যোগকালীন সময়ে তার সদস্যদের পাশে থেকেছে, এবারও সব সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছেন ব্যাংকের সব সহকর্মী। মানুষ হিসেবে এটা আমাদের সবারই নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। ’