প্রকাশ :দৈনিক সমকাল ০৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০৪:৩৩
বড় অঙ্কের মুনাফায় ফিরেছে গ্রামীণ ব্যাংক। সদ্য সমাপ্ত ২০১৬ সালে ক্ষুদ্রঋণ কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানটি ১০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। গ্রামীণ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ২০১৬ সালের আর্থিক বিবরণী এখনও নিরীক্ষা (অডিট) হয়নি। নিরীক্ষা শেষে নিট মুনাফা হিসাব করা হবে। কর অব্যাহতি থাকায় গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালন মুনাফা থেকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাদ দিয়ে নিট মুনাফা হিসাব করে। খেলাপি ঋণের আদায় ভালো হওয়ায় নিরাপত্তা সঞ্চিতি কম রাখতে হয়। ২০১৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ১০৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ড. ইউনূসের অব্যাহতির বছরে অর্থাৎ ২০১১ সালে তার আগের বছরের তুলনায় মুনাফা কমে যায়। ২০১০ সালে মুনাফা ছিল ৭৬ কোটি টাকা। পরের বছর তা কমে দাঁড়ায় ৬৮ কোটিতে। পরের দু’বছর মুনাফা বেশ বাড়ে। ২০১২ সালে ১৪৫ কোটি ও ২০১৩ সালে ১৩৩ কোটি টাকা মুনাফা করে গ্রামীণ ব্যাংক। এরপর নানাবিধ অনিশ্চয়তার কারণে ব্যাংকটির মুনাফা ক্রমান্বয়ে কমছিল। ২০১৪ সালে ৪৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা মুনাফা করে। পরের বছর ২০১৫ সালে মুনাফা নেমে আসে ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকায়। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন কুমার নাগ সমকালকে বলেন, ২০১৬ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল না। প্রাকৃতিক দুর্যোগও বিশেষ হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের কর্মকাণ্ড বিশেষ বিঘি্নত হয়নি। এদিকে নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন করায় কর্মীরাও নতুন উদ্যমে কাজ করেছেন। এতে ব্যাংকের সদস্য বেড়েছে। বেড়েছে ঋণ বিতরণ। আবার খেলাপি ঋণ আদায় বেড়েছে। ফলে ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক মোস্তফা কামাল জানান, নতুন নতুন উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহণ, কর্মীদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং ব্যবস্থাপনার দক্ষতার কারণে পে-স্কেল দেওয়ার পরেও মুনাফা বেড়েছে। নতুন পে-স্কেলের কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় ৪৫০ কোটি টাকা বেড়েছে বলে তিনি জানান। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, গ্রামীণ ব্যাংককে পুনরুজ্জীবিত করতে কাজ শুরু হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক কীভাবে নতুন ভূমিকায় কাজ করতে পারে তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। নিট মুনাফা হিসাবের পর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে গ্রামীণ ব্যাংক। ২০০৬ সাল থেকে গ্রামীণ ব্যাংক শেয়ারহোল্ডাদের ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। ব্যাংকটির ৭৫ শতাংশ শেয়ারহোল্ডার ঋণগ্রহীতা সদস্য এবং ২৫ শতাংশের মালিকানা সরকারের হাতে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত সরকার গ্রামীণ ব্যাংকে ১৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে। এর বিপরীতে লভ্যাংশ পেয়েছে ১৯ কোটি ৬ লাখ টাকা। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের গত ডিসেম্বর শেষে সারাদেশে শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৬৮টিতে। শুরু থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ৪১ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হয়েছে। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি ঋণ বিতরণ করে ১৮ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। ওই বছর আদায়যোগ্য ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা।