গ্রামীণ ব্যাংকের ‘শিক্ষাবৃত্তি’ এবং ‘উচ্চ শিক্ষাঋণ’ কর্মসূচি
দরিদ্র মানুষের কল্যাণে গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৭৬ সালে জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রচলন করে| এ কর্মসূচি সফলভাবে এগিয়ে যাওয়ায় ব্যাংক পর্যায়ক্রমে আরো কল্যাণমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে| তারমধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের সম্মানিত সদস্যদের ছেলে-মেয়ে; অর্থাৎ তাঁদের দ্বিতীয় প্রজম্মকে বিকশিত করার জন্য ১৯৯৭ সালে নামমাত্র সার্ভিস চার্জ (শিক্ষাকালীন সময়ে ০% এবং শিক্ষা সমাপ্তির পর ৫%, যা শিক্ষা সমাপ্তির এক বছর পর হতে ঋণসহ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য) নিয়ে ‘উচ্চ শিক্ষাঋণ কর্মসূচি শুরু করা হয়| পাশাপাশি ঋণগ্রহিতা সদস্যগণের সন্তানদের উত্তম ফলাফল অর্জনে উৎসাহ প্রদান ও মেধা লালনের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে ‘শিক্ষাবৃত্তি’ এর প্রচলন করা হয়|
‘উচ্চ শিক্ষাঋণ’ কর্মসূচির আওতায় ডিসেম্বর’১৭ পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৮৮২ জন ছাত্র/ছাত্রীকে ৩৭৪.৭২ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে| তাদের মধ্যে ছাত্র ৪০ হাজার ৯৩৭ জন এবং ছাত্রী ১২ হাজার ৯৪৫ জন| এ ঋণ নিয়ে তারা সাধারণ বিষয়, এমবিবিএস, প্রকৌশলী ও কৃষি বিষয়ে স্নাতক/স্নাতোকোত্তর এবং বিবিএ/এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করছেন| এদের মধ্যে ১০ হাজারের ঊর্ধ্বে শিক্ষার্থী শিক্ষা সমাপ্ত করে দেশে-বিদেশের সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন| উল্লেখ্য কর্মরতদের মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক এমফিল/পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সম্পৃক্ত হয়েছেন|
গ্রামীণ ব্যাংকের ‘শিক্ষাবৃত্তি’ কর্মসূচির আওতায় ডিসেম্বর’১৭ পর্যন্ত ব্যাংকের সম্মানিত ঋণগ্রহিতা সদস্যগণের ২ লক্ষ ৬১ হাজার ১২৮ জন মেধাবী সন্তানকে ৪৭.৮৫ কোটি টাকা শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে| এদের মধ্যে ছাত্র ১ লক্ষ ৫ হাজার ৫৭৯ জন এবং ছাত্রী ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৪৯ জন| প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়সহ সাংস্কৃতিক ক্যাটেগরিতে প্রতিবছর এ বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে| উল্লেখ্য, মাঠ পর্যায়ে উক্ত ৫টি ক্যাটেগরিতে বৃত্তি লাভকারীদের মধ্য থেকে প্রধান কার্যালয় পর্যায়ে প্রতি ক্যাটেগরিতে সেরাদের সেরা নিয়ে আরো ৫টি সেরা বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে অর্থাৎ তারা হন সারা গ্রামীণ ব্যাংকের মধ্যে বৃত্তি লাভকারী সেরা ৫ মেধাবী| এ কর্মসূচিতে ছাত্রীদের জন্য ৫০% সংরক্ষিত রেখে বাকি ৫০% ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে|
গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষাঋণ ও শিক্ষাবৃত্তি ছাড়াও দেশের মধ্যে Asian University for Women, Chittagong (সদস্য ও কর্মীদের কন্যাসন্তান) এবং বিদেশে Khazanah Asia Scholarship Program, Malaysia এর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সদস্যের সন্তানরা স্কলারশীপ নিয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়ে থাকে|
অপরদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মীদের প্রদত্ত মাসিক চাঁদার ভিত্তিতে গঠিত ‘কর্মীকল্যাণ তহবিল’ কর্মী ও তাদের পরিবারের বিভিন্ন কল্যাণমুখী কাজ করা হয়ে থাকে| তন্মধ্যে কর্মীদের সন্তানদের মেধা লালনে উৎসাহ দেয়ার জন্য প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ফলাফলের ভিত্তিতে সনদপত্রসহ এককালীন বৃত্তি প্রদান করা হয়| গ্রামীণ ব্যাংকের মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন স্তরে এবং প্রধান কার্যালয় পর্যায়ে এ বৃত্তি প্রতিবছর প্রদান করা হয়ে থাকে| এরই ধারাবাহিকতায় গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) রতন কুমার নাগ ২১ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখ, সোমবার ২০১৬-১৭ সালের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে গ্রামীণ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয় পর্যায়ে কর্মরত সহকর্মীদের ৫১ জন মেধাবী সন্তানদের মাঝে বৃত্তি ও সনদপত্র বিতরণ করেন| শুরু থেকে ডিসেম্বর’১৭ পর্যন্ত সহকর্মীদের ১০ হাজার ৫৯৬ জন সন্তানকে ৪ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে|
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) রতন কুমার নাগ
বৃত্তিপ্রাপ্ত সহকর্মীর মেয়ে সেতু আক্তার চিনি-কে সনদপত্র প্রদান করছেন।
পাশে তার মা-বাবা ও গ্রামীণ ব্যাংকের নির্বাহীগণ।
বৃত্তিপ্রাপ্ত সহকর্মীদের সন্তানদের মাঝে গ্রামীণ ব্যাংকের
ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) জনাব রতন কুমার নাগ।